আজকে কুন্তলার ব্লগে Mcdonalds নিয়ে একটা দারুন entry পড়লাম, সেইটা পড়তেই আমার নিজের একটা গল্পের কথা মনে পরে গেল। আমার প্রথম
বাংলা ব্লগ পোস্ট পড়ে বেশ উৎসাহ পেয়ে, হয়ত একটু বাড়ই পেলাম, কিন্তু তাতে কি
হলো? আসলে হঠাৎ একদিন দেখি কৌশিক দার মা ও আমার ব্লগ এ কমেন্ট করে গেছেন।
সেইটা দেখার পর থেকে খুব guilty feel করছি। মাসি যে লিখলেন, "এটা তোমার
পুরাণো লেখা, কিন্তু এটাই তো শেষ বাংলা লেখা তোমার। তাই কতবার যে পড়লাম।...
আরো লেখো। বাংলায় লেখো।" কমেন্টটা পড়ার পর থেকে প্রতিজ্ঞা করলাম যে পরের পোস্টটা বাংলাতেই করব। বাংলাতে টাইপ করতে তো একটু সময় লাগে, তাই দেরী হলো।
(এখনো চন্দ্রবিন্দু টা এড়িয়ে চলছে, ঠিক বাগে আনতে পারছি না। সেই কারণে
চন্দ্রবিন্দু গুলো মনে মনে কল্পনা করে নিলে ভালো হয়। আর বাকি কোনো বানান
ভুল হলে, ত্রুটি মার্জনা করিবেন।)
এর আগেও বলেছি আমি জন্মেছি টরন্টোয় আর বড় হয়েছি কলকাতায়।
বছর ছয়েক বয়েস থেকে ঊনিশ পর্যন্ত কলকাতায় কাটিয়ে টরন্টো ফিরে এলাম
ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোয় bachelors করতে। সে এক অতি বাজে অভিজ্ঞতা। কলকাতায়
ভাই কে ফেলে, সমস্ত বন্ধুদের ছেড়ে, এই বিদেশে (যদিও কানাডা ঠিক আমার কাছে
বিদেশ নয়) কী কুক্ষণে যে আবার ফেরত আসতে হলো কে জানে? এখন ভাবতে ভয় হয়,
কিন্তু তখন মনে হয়েছিল হয়ত কলকাতায় থেকে, বাসন্তী দেবী কলেজ এ আর্টস পড়াটাই
মন্দের ভালো হত আর কি। পরে একবার কোনো একটা কারণে বাবার কাছে শুনতে
হয়েছিল, " এই টরন্টোয় ফিরেই যত ঝামেলা হলো। কলকাতায় থাকতি, বাসন্তী দেবী
কলেজ এ পড়তি আর পরে, দেখে শুনে একটা বিয়ে দিয়ে দিতাম!" কি সাংঘাতিক! এইটা
কোনো আক্ষেপ হলো!?
টরন্টোয় সেপ্টেম্বর মাস এ যা ঠান্ডা, সেইরকম ঠান্ডা তখন
পুরো শীতকালেও কলকাতায় পড়ত না, আর এমনিতেই সবাই জানে আমি বেশ শীতকাতুরে।
কলকাতার শীতে আমি ফুল স্লীভ শার্ট পরে স্কুল যেতাম, ছেলেদের শার্ট পরতাম
বলে বকুনিও খেতাম, কিন্তু আমাকে কেউ ঠেকাতে পারত না। টরন্টোয় সেপ্টেম্বর
মাস এর weather এই আমি ইয়া মস্ত বড় জ্যাকেট, মাফলার, গ্লাভস, টুপি পরেই
বাইরে যেতাম। দেখে বেশ ওই "ফ্রেশ অফ দা বোট" ই লাগত - এই কথা স্বীকার করতে
কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এদিকে আবার অন্য বিপদ, মুখ খুললেই কিন্তু
কানাডিয়ান accented ইংরেজী বেরোত! এইটা কি করে হয় আমি এখনো বুঝিনা - প্লেন
থেকে নামতেই আমি কেমন মাতৃভূমি তে ফিরে এলাম এই রকম একটা ভাব নিয়ে, ফর ফর, খাচ্যাং মাচ্যাং করে ইংরেজি বলা শুরু করলাম। হয়ত ছয় বছর বয়েসে থেকে
dormant ছিল - কলকাতায় সবাই হ্যাটা করবে এই ভেবে ওই ছোট বয়েসেই নিজের আসল
চেহারা টা কে সামলে রেখেছিলাম।
প্রথম ক্লাস এর দিন। ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো হলো বিশাল
ক্যাম্পাস। ৪ টে সাবওয়ে স্টেশন জুড়ে, ক্যাম্পাস এর এ মাথা থেকে ঐ মাথা অবধি
হাফ হেঁটে হাফ ছুটে যেতে মোটামোটি কুড়ি মিনিট মত লাগে, সেইখানে কেমন জানি
একটা বোকাবোকা হাবা হয়ে গেলাম। ভুল করেছিলাম যে ক্লাস শুরু হবার আগে একবারও
ক্যাম্পাস মুখো হইনি। কুয়োর ব্যাং কে সাগরে ফেললে যেইরকম হবে সেইরকম
অবস্থা হয়েছিল। সকাল নয়টায় বায়োলজি ক্লাস শুরু, সেই lecture টা হয় আবার
convocation hall এ। ক্লাস এর মোট স্টুডেন্ট সংখ্যা হলো ১৫০০। এমতাবস্থায় বিপদ যেন আরো ঘোরতর হলো। "কুল নাই সীমা নাই" - যে দিক পানেই চাই অকুল দরিয়া। ক্লাস এর শেষে বাইরে এসে দেখি ঝমঝম করে
বৃষ্টি পড়ছে - ছাতা আনিনি। কিন্তু পরের ক্লাস টায় যে যেতে হবে? মাথা তুললে
দেখলাম, একটা খয়েরি চামড়ার মেয়ে ছাতা নিয়ে, এক হাত চুড়ি পরে বেশ "I Know
Where I Am Going" এইরকম একটা ভাব নিয়ে গটগট করে হেঁটে যাচ্ছে। আমি তড়িঘড়ি
একদম ছাতার তলায় ঢুকে পরে জিজ্ঞেস করলাম, "Hi! Do you know where Sid Smith
Hall is?" সে ঐরকম একটা কিম্ভূতকিমাকার বেশে ছাতার নিচে uninvited ঢুকেই
পড়েছে একজন মেয়েকে দেখে বলল, "Sure, Let me show you." শাম্ভাভি, (এত বছর
পর ও সে আমার ভীষণ ভালো বন্ধু) আমাকে প্রকৃতির নিঠুর হাত থেকে বাঁচিয়ে Sid
Smith Hall এ পৌঁছে দিল। আমি ক্লাস টা কে কোনরকমে বার করে যখন ১০ মিনিট
দেরী তে পৌঁছে দেখি এ মা, এইটা তো ক্লাস নয়, কারো অফিস! সেই ভদ্রলোক খুব
অবাক হয়ে হয়ে বললেন, "I hope there isn't a class here, this is my
office!" ভদ্রলোক বই হাতড়ে দেখে দিলেন যে আমার ক্লাস যেই বিল্ডিং এ সেইটা
ক্যাম্পাস এর একদম অন্য প্রান্তে! আমাকে রাস্তা বুঝিয়ে দিয়ে, বিদায় দিলেন।
আমি রাস্তায় বেরিয়ে দেখি তখনও বৃষ্টি পড়ছে, বাইরে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা
গেল মচকে, চশমা গেল ভেঙ্গে। ব্যাস অকুল পাথার।
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনো রকমে campusএর ওই প্রান্তে পৌছেছি কিন্তু কোনো building এর নাম
ই তো দূর থেকে দেখতে পাই না। প্রত্যেকটা বিল্ডিং এর সামনে পর্যন্ত খুঁড়িয়ে দৌড়ে যাই, নাম পড়ি, আবার খুঁড়িয়ে দৌড়ে ফুটপাথে ফিরি, খুঁড়িয়ে দৌড়ে একটু
সামনে এগোই, আবার নাম দেখতে যাই। এইভাবে বিল্ডিং টি বার করে, ক্লাস এ গিয়ে
পৌছলাম এক ঘন্টা লেট। একটা চুপচুপে ভিজে কাককে মস্ত বড় জ্যাকেট, ভেজা
মাফলার-গ্লাভস-চুল, ভাঙ্গা চশমা আর মুচকে যাওয়া পা দিয়ে দিলে যেরকম দেখতে
লাগবে ঠিক সেইরকম বেশে আমি ঢুকলাম ক্লাস এ। এ ক্লাসে আবার মাত্র ৮ জন
স্টুডেন্ট - architectural seminar. এই ক্লাস এ আমি এলাম কি করে, মানে
রেজিস্ট্রেশন হলো কি করে, এই সব ভাবতে ভাবতে, শীতে কাঁপতে কাঁপতে নির্লজ্জ বেহায়ার মতন ঘুমিয়েও পরলাম। ক্লাসের শেষে,ঘুম থেকে ছুটে গেলাম
রেজিস্ট্রার'স অফিসে। সেইখানে গিয়ে কাকুতি মিনতি করে ক্লাস বদলানো হলো।
এইবার প্রচন্ড খিদে। দুরে bloor street এর ওপর সারি দিয়ে কয়েকটা দোকান। "কফি ! আহ!
গরম!" এই সব কথা ভেবে কফির দোকানের দিকে এগিয়ে গেলাম। দোকানে ঢুকে এক গাল
হেসে বললাম, "Can I have a cup of coffee please?"
server - size?
আমি - ummmm... medium?
s - what kind?
আ - huh?
আ - huh?
s - What Kind?
আ - I'm sorry I don't know what you mean.
আ - I'm sorry I don't know what you mean.
s - full bodied medium roast, regular, dark blend, irish cream, hazelnut.... (এই সব কি কয়েকটা বলল)
আ - ummm... maybe, regular?
আ - ummm... maybe, regular?
s - HowWouldYaLikeIt?
আ - Excuse Me?
আ - Excuse Me?
s - How Do You Like Your Coffee Miss?
আ - In a cup....?
আ - In a cup....?
S - Ma'am, How much Sugar and Cream do you want in your coffee?
আ - Cream?! ... Sorry, can I just have a cup of coffee with some milk and sugar please?
আ - Cream?! ... Sorry, can I just have a cup of coffee with some milk and sugar please?
যা
কফি হাতে পেলাম সেইটা আর মুখে দিতে পারিনি। মনে হলো ১০০ টাকা নর্দমার জলে
ফেলে দিলাম। এ বাবা ঐটা কি? McDonald's নাকি?! কি মজা! আমি আজকেই Big Mac
খাব?! উফফফ কি খিদে!
server - Hello. How may I help you?
আমি - Hi! Can I have a Big Mac Please?
আমি - Hi! Can I have a Big Mac Please?
S - Just the sandwich?
আমি- Does it come with anything else?
আমি- Does it come with anything else?
S- Fries and a Drink?
আমি- For free?
আমি- For free?
এই
রকম উদ্ভট প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ত কোনোদিন হতে হয়নি, তাই একটু ভড়কে গিয়ে
server হেসে ফেলে বলল, "Yes. wouldn't it be awesome if we didn't have to
though?" (আমার এখন মনে হয় যে সে ভেবেছিল এমন প্রশ্ন সিরিয়াসলি হতেই পারে
না, মশকরা করছিলাম বোধ হয়)
আমি - খুব uncomfortable একটা হাসি দিয়ে বললাম, "What Kind of Drink?"
আমি - খুব uncomfortable একটা হাসি দিয়ে বললাম, "What Kind of Drink?"
server - Whatever pop you want.
আমি - (মনে মনে, "the drink pops?") yes please, I'll have a drink.
আমি - (মনে মনে, "the drink pops?") yes please, I'll have a drink.
Server - ForHereOrToGO?
আমি - huh?
আমি - huh?
Server - FORHEREORTOGO?
আমি - Sorry, I don't understand what that means.
আমি - Sorry, I don't understand what that means.
Server - Would You LIke to Eat it Here? Or would you like to take it to go?
আমি - Here. (দীর্ঘশ্বাস ) I would like to eat it here. Thank you.
McDonald's খাবার কি অপরিসীম তৃপ্তি সেইদিন ই বুঝেছিলাম। দিনের শেষে, কুয়োর ব্যাং সমুদ্র জয় করে ঘরে ফিরল।
Interesting post
ReplyDeleteThanks!
Deletehahahaha......very entertaining piece of writing Rini. Lesson to learn: Always figure out in advance where your classes are....
ReplyDeleteম্যাকডনাল্ড'সের সবথেকে বড় সুবিধে হল ঢোকার আগেই তুই জানিস্ কী পাওয়া যাবে। অচেনা শহরে সেটা একটা বিরাট ব্যাপার। একটা সাংঘাতিক আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঢুকি।
Deleteeta eakdom thik kotha... ar bibhinno desh er cuisiner shonge miliye ki kore ora menu toiri kore etao amar dekhte besh bhalo lage. :D
DeleteThank you Kakoli di!
Deleteবাঃ, ভাল লিখেছ। আমরা, যারা "বুড়ো বয়সে" এদেশে এসেছি, তারাও এইরকম নানান অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছি, ঠেকে শিখেছি! আরো লেখো, শুভেচ্ছা রইল।
ReplyDeleteThank you nilmani da!! :D
DeleteExactly my experience. :) Thanks for sharing.
ReplyDeleteRini, darun hoyeche re! Forhereortogo sune amar ekti chena chele Wendy theke beriye chole gechilo..bhebechilo oke chole jete bola hochhe. Ar prothom din State College e Starbucks e gechi, ami ar amar ek bondhu(sheo kolkata theke esheche) ami to kayda kore "tea, please" bolechi karon ekta coffee o chinte parchi na. She Espresso dekhe alladito hoye boleche "that one" mone shei biyebarir phusshh phussh wala espresso machine. tarpor je okhadyo kalo teto coffee eshechilo, sheta o khete pare ni :)
ReplyDeletekintu shei tumi eakhon Black coffee khao! :D Tumi je kayda kore tea please bolechhile, shei cha o nishchoi cha=er moton lageni!
Deleteকি চমৎকার লিখেছিস রিনি! আমিও যেন তোর সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এদিক ওদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছিলাম। তুই কি অভ্র ব্যবহার করলি? তাহলে shift 6 অর্থাৎ ^ চিহ্নটা দিলেই চন্দ্রবিন্দু হয়ে যাবে। "উৎসাহ" টা ঠিকই আছে, "হঠাৎ" টা খণ্ড-ত দিয়ে হয়। রেগুলার লিখিস, কেমন? ভাল লাগল পড়ে।
ReplyDeleteKausik da, utshaho te to khondo taw chhilo na, eakhon ami tomar theke cut paste kore dilam. Ami to eakebare browser ei type kore, blog e ba email language change kore. koto gulo jinish kichhutei thik korte parchhi na.
DeleteThen you are the perfect candidate for Avro! আর তুই যদি ক্রোম ব্যবহার করিস, তাহলে অভ্রর একটা ক্রোম extension আছে, যেটা দিয়ে সরাসরি browser-এ টাইপ করা যায় বাংলায়।
Deleteufff.....darun laglo pore....sokalbela ta ak dhakkay ujjal hoye gelo!!
ReplyDeleteওঃ, রিনি দারুণ, দারুণ। কি ঝর্ঝরে লেখা। কোথাও থামা গেলনা। একটানে পড়ে ফেললাম। তোমার অভিজ্ঞতা জেনে এখন মজা লাগছে বটে, কিন্তু তখন? বৃষ্টির মধ্যে ভিজে, খুঁড়িয়ে, দৌড়ে, আহারে নাকালের একশেষ। ভাগ্যিস্ শেষে ম্যাকডি ছিল।একেবারে বিপত্তারণ মধুসূদন। তাই না? তবে একটা কথা। এই অবস্থা যদি আমাদের দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমি ভোগ করতে তবে কোন ওয়েটারের কাছ থেকে এইরকম সদয় দূরে থাক( চিন্তাও কোরোনা ) ছাত্রদের ব্যবহারে নিজের নামই ভুলে যেতে। জানতে ইচ্ছা করে, ওদেশে কি র্যাগিং নেই?
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteআরেকটা কথা। (দ্বিতীয়বার পড়ার পর) এত কষ্ট করে পড়াশুনার শুরু! তুমি যে সেখান থেকে তখনই পিছন ফিরে দৌড় লাগাওনি, তার জন্যই তোমায় একটা ভিক্টোরিয়া ক্রস বা শৌর্যচক্র দেওয়া যায়। বৃষ্টিতে ভিজে, চশমা ভেঙ্গে, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ক্লাস খুঁজে বের করার বর্ণনাটা বেশ প্যাথস-ইন্ডিউসিং কিন্তু! :)
ReplyDelete